ভূমিকা (Introduction)
শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছানোর গল্পগুলো সবসময়ই অনুপ্রেরণার। যখন কোনো ব্যক্তি কেবল নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, বরং একটি দেশের অর্থনীতি ও লাখো মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক ছাপ ফেলেন, তখন তিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হন। বাংলাদেশের শিল্প খাতে এমনই এক জীবন্ত কিংবদন্তি হলেন আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা—যিনি সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শিল্পে পারদর্শী। তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ‘বসুন্ধরা গ্রুপ’ আজ বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সাধারণত, একজন শিল্পপতির পরিচয় তার ব্যবসার পরিধি দিয়ে মাপা হয়। কিন্তু আহমেদ আকবর সোবহানের গল্পটি তার চেয়েও অনেক বড়। এটি একটি সুদূরপ্রসারী স্বপ্নের গল্প, যা কয়েক দশক আগে এক তরুণ উদ্যোক্তার চোখে জন্ম নিয়েছিল। এই পোস্টে আমরা সেই অবিশ্বাস্য যাত্রার গভীরে যাব। আমরা জানব তার শৈশব ও বেড়ে ওঠার কথা, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। আমরা দেখব, কীভাবে তিনি আবাসন খাতের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টরে পা রেখে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন এবং ধীরে ধীরে বসুন্ধরা গ্রুপকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত করেছেন। এই আলোচনায় কেবল তার ব্যবসায়িক সাফল্যই নয়, তার দর্শন, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথাও উঠে আসবে। চলুন, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিল্পপতি এবং Bashundhara Group Chairman আহমেদ আকবর সোবহানের সেই অসাধারণ পথচলার সাক্ষী হই।
শৈশব থেকে স্বপ্নযাত্রা: ভবিষ্যতের ভিত রচনা
যেকোনো মহীরুহের জন্ম হয় একটি ছোট বীজ থেকে, যা সঠিক পরিচর্যা ও পরিবেশে বেড়ে ওঠে। আহমেদ আকবর সোবহানের জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, দূরদৃষ্টি এবং কঠোর পরিশ্রমের বীজ রোপিত হয়েছিল তার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতেই। তার প্রারম্ভিক জীবন, পারিবারিক শিক্ষা এবং বেড়ে ওঠার গল্পই তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার মূল ভিত্তি তৈরি করেছিল।
জন্ম ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট
আহমেদ আকবর সোবহানের জন্ম পুরান ঢাকার ইসলামপুরে, এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা, মরহুম আলহাজ্ব আবদুস সোবহান ছিলেন একাধারে ঢাকা হাইকোর্টের একজন আইনজীবী এবং একজন জনপ্রতিনিধি। পারিবারিকভাবেই তিনি সততা, শৃঙ্খলা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এক দারুণ শিক্ষা পেয়েছিলেন। তার বাবা কেবল একজন সফল পেশাজীবীই ছিলেন না, সমাজের প্রতি তার গভীর দায়বদ্ধতাও ছিল। বাবার কাছ থেকে পাওয়া এই মানবিক গুণাবলি এবং মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা তার পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে তার বাবা মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতেন এবং আইনি সহায়তার মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। এই অভিজ্ঞতা তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করে। পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক ও কর্মচঞ্চল পরিবেশ তার ব্যবসায়িক মনন তৈরিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি দেখতেন, কীভাবে ছোট ছোট ব্যবসা থেকে বড় উদ্যোগ গড়ে ওঠে, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে একজন সাধারণ ব্যবসায়ীও সমাজে সম্মান অর্জন করেন। এই পারিপার্শ্বিক অবস্থাই হয়তো তার চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল এবং তাকে শিখিয়েছিল যে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি লক্ষ্য স্থির থাকে এবং সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করা যায়। পারিবারিক মূল্যবোধ এবং পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার এই সংমিশ্রণই তাকে ভবিষ্যতের এক সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম সোপান রচনা করে দিয়েছিল।
শিক্ষাজীবন ও তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এই চিরন্তন সত্যটি আহমেদ আকবর সোবহানের জীবনেও প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কেবল সনদ অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি, বরং জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি অর্জনের একটি পথ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তার শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপই ছিল তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য এক একটি প্রস্তুতির মঞ্চ।
তিনি ঢাকার prestigious বিদ্যাপীঠগুলো থেকে তার স্কুল ও কলেজের পাঠ সমাপ্ত করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যয়ন করার সময় তিনি কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তচিন্তার পরিবেশ তার ভেতরের সুপ্ত entrepreneurial আকাঙ্ক্ষাকে আরও জাগ্রত করে তোলে। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, গতানুগতিক চাকরির পথে না হেঁটে যদি নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন, তবে দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।
ছাত্রজীবনেই তার মধ্যে ব্যবসার প্রতি এক ধরনের সহজাত আগ্রহ ও প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যেত। তিনি সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতেন। তার মনে বড় কিছু করার স্বপ্ন তখন থেকেই দানা বাঁধতে শুরু করে। তিনি এমন এক উদ্যোগের স্বপ্ন দেখতেন, যা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য আনবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোই ছিল তার স্বপ্ন দেখার এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। তারুণ্যের সেই আকাঙ্ক্ষা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞান মিলেই তাকে পরবর্তীকালে ব্যবসায়িক জগতে এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় নামতে সাহস জুগিয়েছিল।
এক নতুন দিগন্তের সূচনা: ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট
প্রতিটি সফল গল্পের একটি নির্দিষ্ট সূচনা বিন্দু থাকে। আহমেদ আকবর সোবহানের শিল্প সাম্রাজ্যের বিস্ময়কর যাত্রার সেই সূচনা হয়েছিল রিয়েল এস্টেট খাতের মাধ্যমে। আশির দশকের শেষ দিকে, যখন দেশের অর্থনীতি সবেমাত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে, তখন তিনি এমন একটি খাতে প্রবেশ করেন যা ছিল অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কিন্তু একই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ও অসংগঠিত। তার প্রথম ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং আবাসন খাতে তার বিপ্লবী পদক্ষেপগুলো কেবল তার জন্যই নয়, পুরো দেশের জন্যই এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।
ব্যবসার জগতে প্রথম পদক্ষেপ
১৯৮৭ সাল। আহমেদ আকবর সোবহান তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রথম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাঃ) লিমিটেড। এটিই ছিল আজকের বিশাল বসুন্ধরা গ্রুপের ভ্রূণ। সেই সময়ে ঢাকার আবাসন খাত আজকের মতো এতটা সংগঠিত ছিল না। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাসস্থান, কিন্তু একটি পরিকল্পিত ও নিরাপদ আবাসনের ধারণা তখনও সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করত, যেখানে আধুনিক নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা, যেমন—প্রশস্ত রাস্তা, নিরাপত্তা, উন্মুক্ত স্থান বা পরিকল্পিত дренаж ব্যবস্থা—এসবের বালাই ছিল না।
তিনি এই খাতের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটোই খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই শহরে একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ এবং আধুনিক জীবনযাত্রার সুবিধাসহ আবাসন প্রকল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। তিনি তার কোম্পানির প্রকল্পের নাম দেন ‘বসুন্ধরা’। এই নামটি তিনি খুব যত্ন সহকারে নির্বাচন করেছিলেন। ‘বসুন্ধরা’ শব্দের অর্থ হলো ‘ধরিত্রী’ বা ‘পৃথিবী’। এই নামকরণের পেছনে তার দর্শন ছিল অত্যন্ত গভীর—তিনি কেবল ইট-পাথরের জঙ্গল তৈরি করতে চাননি, তিনি মানুষের জন্য এক টুকরো নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যেখানে তারা安心して তাদের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে পারবে। এই মানবিক এবং দূরদর্শী দর্শনই তার প্রথম উদ্যোগকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল এবং ভবিষ্যৎ সাফল্যের পথ তৈরি করেছিল।
পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পের ধারণা
আহমেদ আকবর সোবহানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো, তিনি ঢাকার মানুষকে প্রথমবারের মতো একটি বৃহৎ এবং সুপরিকল্পিত টাউনশিপের ধারণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাঃ) লিমিটেড-এর অধীনে তিনি ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা’ প্রকল্পের গোড়াপত্তন করেন। এটি ছিল নিছক একটি প্লট বিক্রির প্রকল্প নয়, বরং এটি ছিল একটি সামগ্রিক জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।
তৎকালীন ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে তার এই পরিকল্পনা ছিল এককথায় বিপ্লবী। তিনি এমন একটি আবাসিক এলাকা তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে থাকবে প্রশস্ত রাস্তা, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, খেলার মাঠ, শপিং মল এবং সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, মানুষ শুধু একটি বাড়ি চায় না, তারা একটি সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক পরিবেশও চায়, যেখানে তাদের সন্তানরা নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পরিকল্পনায় এই প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের শুরু থেকেই তিনি গুণগত মান এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। যখন অন্যান্য ডেভেলপাররা কেবল প্লট বিক্রি করেই দায়িত্ব শেষ করত, সেখানে তিনি প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, যেমন—রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা তৈরির ওপর সর্বোচ্চ জোর দেন। তার এই সততা, স্বচ্ছতা এবং সময়মতো প্রকল্প হস্তান্তরের নীতি খুব দ্রুতই মানুষের আস্থা অর্জন করে। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে বসুন্ধরা একটি স্বপ্নের আবাসন প্রকল্পে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষের এই আস্থাই ছিল তার সবচেয়ে বড় মূলধন, যা তাকে পরবর্তীতে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী গড়ে তোলার আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা শুধু একটি সফল আবাসন প্রকল্পই নয়, এটি আধুনিক ঢাকার নগর-পরিকল্পনার একটি মাইলফলকও বটে।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা: একটি শিল্প সাম্রাজ্যের বিস্ময়কর
আবাসন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের পর আহমেদ আকবর সোবহান সেখানেই থেমে থাকেননি। তার স্বপ্ন ছিল আরও বড়, আরও বিস্তৃত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। এই উপলব্ধি থেকে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে শুধু একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প খাতে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করেন। তার হাত ধরেই বসুন্ধরা গ্রুপ একটি শিল্প সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, যার দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অধ্যায়।
ব্যবসার বৈচিত্র্যকরণ: রিয়েল এস্টেট থেকে শিল্পায়ন
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আহমেদ আকবর সোবহান তার ব্যবসার বৈচিত্র্যকরণের এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেন। তার কৌশল ছিল অত্যন্ত বিচক্ষণ—তিনি এমন সব খাতে বিনিয়োগ করেন, যা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার লক্ষ্য ছিল আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং এর মাধ্যমে দেশের টাকা দেশেই রাখা।
- নির্মাণ শিল্পে বিপ্লব: তিনি দেশের ক্রমবর্ধমান নির্মাণ শিল্পের চাহিদা পূরণে মনোযোগ দেন। প্রতিষ্ঠা করেন বসুন্ধরা সিমেন্ট, যা খুব অল্প সময়েই গুণগত মানের জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। এরপর তিনি ইস্পাত শিল্পে প্রবেশ করেন এবং বসুন্ধরা স্টিলের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
- কাগজ ও টিস্যু শিল্প: একসময় দেশের কাগজের বাজার ছিল মূলত আমদানি-নির্ভর। তিনি এই খাতে বিশাল বিনিয়োগ করেন এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি শুরু করে। একইভাবে, বসুন্ধরা টিস্যু দেশের ঘরে ঘরে একটি অপরিহার্য পণ্যে পরিণত হয়।
- জ্বালানি খাত: তিনি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এলপি গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করেন। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি।
- খাদ্য ও পানীয়: দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য তিনি বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন, যার অধীনে আটা, ময়দা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
এই প্রতিটি উদ্যোগের পেছনে তার মূল দর্শন ছিল—সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং ভোক্তাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। তার এই কৌশলের ফলেই বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিটি খাতে খুব দ্রুততার সাথে মার্কেট লিডার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
বসুন্ধরা সিটি: দেশের রিটেইল খাতে এক মাইলফলক
আহমেদ আকবর সোবহানের দূরদৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন হলো ‘বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’। ২০০০ সালের দিকে তিনি যখন একটি আন্তর্জাতিক মানের শপিং মল তৈরির পরিকল্পনা করেন, তখন অনেকেই বিষয়টিকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে এবং তাদের একটি আধুনিক ও নিরাপদ শপিং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা বসুন্ধরা সিটি শুধু একটি শপিং মল ছিল না, এটি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ লাইফস্টাইল সেন্টার। এর স্থাপত্যশৈলী, সুবিশাল পরিসর, ব্র্যান্ডেড শোরুম, ফুড কোর্ট, মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা এবং থিম পার্ক—সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের জন্য নতুন। এটি দেশের রিটেইল খাতে এক নীরব বিপ্লব নিয়ে আসে এবং মানুষকে একটি ছাদের নিচে কেনাকাটা ও বিনোদনের এক নতুন পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। বসুন্ধরা সিটি আজও দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গন্তব্য এবং এটি আহমেদ আকবর সোবহানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ: গণমাধ্যম জগতে শক্তিশালী পদচারণা
ব্যবসার পাশাপাশি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আহমেদ আকবর সোবহান গণমাধ্যমের গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড’।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই গ্রুপের অধীনে থাকা প্রতিটি গণমাধ্যম—দৈনিক কালের কণ্ঠ, দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪ এবং রেডিও ক্যাপিটাল—পাঠক ও দর্শকের আস্থা অর্জন করে। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং বরাবরই পেশাদার সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ আজ দেশের গণমাধ্যম জগতে এক শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর, যা সত্য প্রকাশে এবং দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
আহমেদ আকবর সোবহানের ব্যবসায়িক দর্শন ও নেতৃত্বের গুণাবলী
যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে থাকে তার কর্ণধারের শক্তিশালী দর্শন ও নেতৃত্ব। বসুন্ধরা গ্রুপের আকাশচুম্বী সাফল্যের পেছনেও রয়েছে আহমেদ আকবর সোবহানের অসামান্য ব্যবসায়িক দর্শন, গভীর দেশপ্রেম এবং কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি কেবল একজন বিনিয়োগকারী নন, তিনি একজন стратеজিস্ট এবং visionary নেতা, যার প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
দেশের জন্য, মানুষের জন্য’ – এক অসামান্য মূলমন্ত্র
“দেশের জন্য, মানুষের জন্য”—এটি শুধু বসুন্ধরা গ্রুপের একটি স্লোগান নয়, এটি আহমেদ আকবর সোবহানের জীবনের মূল দর্শন। তার প্রতিটি ব্যবসায়িক উদ্যোগের গভীরে এই মন্ত্রটি প্রোথিত। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যবসা শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য নয়, বরং এর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
এই দর্শন থেকেই তিনি সেসব খাতে বিনিয়োগ করেছেন, যা দেশের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে সিমেন্ট, ইস্পাত, কাগজ, জ্বালানি কিংবা গণমাধ্যম—তার প্রতিটি উদ্যোগই কোনো না কোনোভাবে দেশের অগ্রগতি এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের সাথে জড়িত। তিনি প্রায়ই বলেন, “আমরা যা কিছু করি, তা দেশের ভালোর জন্যই করি।” এই গভীর দেশপ্রেমই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে এবং তাকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
দূরদৃষ্টি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা
আহমেদ আকবর সোবহানের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো তার অবিশ্বাস্য দূরদৃষ্টি। তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে চিন্তা করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোকে আগেই চিহ্নিত করতে পারেন। আশির দশকে যখন তিনি পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পের সূচনা করেন, কিংবা ২০০০-এর দশকে যখন তিনি আন্তর্জাতিক মানের শপিং মলের স্বপ্ন দেখেন, তখন অনেকেই তার সেই পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী মনে করেছিলেন। কিন্তু সময় প্রমাণ করেছে, তার প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক এবং সময়োপযোগী।
তিনি সবসময় নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ধারণাকে স্বাগত জানান। তার শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনি বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করেন, যা ઉત્પાદনের গুণগত মান বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমায়। তিনি ঝুঁকি নিতে ভয় পান না, বরং সুচিন্তিত ঝুঁকিকে তিনি সাফল্যের সোপান হিসেবে দেখেন। তার এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎকে পড়তে পারার দক্ষতাই বসুন্ধরা গ্রুপকে surekli সাফল্যের পথে পরিচালিত করছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মী ব্যবস্থাপনা
আহমেদ আকবর সোবহান গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে, একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার কর্মীরা। তিনি তার কর্মীদের শুধু কর্মচারী হিসেবে দেখেন না, বরং তাদেরকে ‘বসুন্ধরা পরিবার’-এর সদস্য হিসেবে গণ্য করেন। তিনি প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি কর্মীর সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, যা দেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে এক বিশাল অবদান।
তিনি কর্মীদের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করেন। তাদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ, প্রশিক্ষণ এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। তিনি তার কর্মীদের কথা শোনেন, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করতে কখনো কার্পণ্য করেন না। তার এই মানবিক এবং সহানুভূতিশীল নেতৃত্বই কর্মীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ এবং আনুগত্য তৈরি করে, যা তাদের সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করে। তার নেতৃত্বে বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু একটি সফল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি একটি আদর্শ কর্মক্ষেত্রও বটে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনহিতকর কার্যকলাপ
আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ কেবল ব্যবসায়িক মুনাফার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তারা সামাজিক দায়বদ্ধতাকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ‘দেশের জন্য, মানুষের জন্য’—এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে তারা প্রতিনিয়ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া এবং আর্তমানবতার সেবায় নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জনহিতকর কার্যকলাপগুলো দেশ ও সমাজের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াঙ্গনে অবদান
বসুন্ধরা গ্রুপ বিশ্বাস করে, একটি শিক্ষিত ও সুস্থ জাতিই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। এই বিশ্বাস থেকে তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
- শিক্ষা: দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের অন্যতম বড় উদ্যোগ হলো বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, যা সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবা প্রদান করছে।
- স্বাস্থ্য: সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে বিশেষায়িত হাসপাতাল। এর মধ্যে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, এবং এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা (যৌথ উদ্যোগে) অন্যতম। এসব হাসপাতালে গরিব ও দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
- ক্রীড়াঙ্গন: দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত ফুটবল ক্লাব ‘বসুন্ধরা কিংস’ অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের ফুটবলে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে। ক্লাবটি শুধু ঘরোয়া লীগেই চ্যাম্পিয়ন হয়নি, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশের সুনাম বয়ে আনছে। এ ছাড়া, তারা দেশের ক্রিকেট, হকি এবং অন্যান্য খেলাধুলাতেও নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।
আর্তমানবতার সেবায় বসুন্ধরা গ্রুপ
যেকোনো জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটের মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ সর্বদা অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের মানবিক সহায়তার হাত দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিস্তৃত।
- দুর্যোগকালীন সহায়তা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, কিংবা শীতের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য তারা নিয়মিতভাবে ত্রাণসামগ্রী, যেমন—খাবার, বস্ত্র এবং ঔষধ বিতরণ করে।
- কোভিড-১৯ মহামারী: বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যখন দেশে হাসপাতালের সংকট তীব্র, তখন তারা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিশাল অঙ্কের অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ২১ দিনের মধ্যে দেশের বৃহত্তম করোনা হাসপাতাল নির্মাণ করে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই হাসপাতাল হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে।
- অন্যান্য মানবিক উদ্যোগ: এ ছাড়াও, বসুন্ধরা গ্রুপ দুস্থদের জন্য গৃহ নির্মাণ, পবিত্র রমজান মাসে ইফতার বিতরণ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় মানুষের কল্যাণে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই মানবিক উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে যে, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি মানবদরদী সংগঠনও।
উপসংহার (Conclusion)
আহমেদ আকবর সোবহানের জীবন ও কর্ম একটি মহাকাব্যের মতো, যার প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সাফল্যের এক অবিশ্বাস্য গল্প। একজন দূরদর্শী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি কেবল একটি বিশাল শিল্প সাম্রাজ্যই গড়ে তোলেননি, তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পট পরিবর্তনেও রেখেছেন অসামান্য অবদান। তার হাতে গড়া বসুন্ধরা গ্রুপ আজ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক অবিচ্ছেদ্য প্রতীক।
পুরান ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আবাসন খাত থেকে শুরু করে শিল্প, মিডিয়া এবং ক্রীড়াঙ্গন—যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, তিনি লাখো মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এক নতুন স্থাপন করেছেন।
আহমেদ আকবর সোবহান শুধু একজন ব্যবসায়ীই নন, তিনি একজন অনুপ্রেরণা। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য এক জীবন্ত কিংবদন্তি, যিনি শিখিয়েছেন কীভাবে ব্যবসার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবা করা যায়। তার ‘দেশের জন্য, মানুষের জন্য’ দর্শন বাংলাদেশের শিল্প জগতে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
আহমেদ আকবর সোবহানের কোন উদ্যোগটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।