জহুরুল ইসলাম: ইসলাম গ্রুপ – বাংলাদেশের ব্যবসায় ইতিহাসের এক কিংবদন্তি
ভূমিকা
বাংলাদেশের ব্যবসায় ইতিহাসে এমন কিছু নাম রয়েছে, যাদের অবদান শুধু একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তারা পুরো জাতির অর্থনীতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই ধরনের একজন কিংবদন্তি উদ্যোক্তার নাম হলো জহুরুল ইসলাম, যিনি ইসলাম গ্রুপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অঙ্গনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন।
আজকের বাংলাদেশে যখন নতুন নতুন স্টার্টআপ এবং উদ্যোক্তারা বিশ্ববাজারে প্রবেশ করছে, তখন জহুরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম তাদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে।
বর্তমান এক বিংশ শতাব্দীতে এসে কোটিপতি শব্দ টা অনেকটা মামনি মনে হয় । তবে একটা সময় ছিল বাংলাদেশ কোটিপতি হাতে গোনা কয়েকজন ছিল । তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জহুরুল ইসলাম। একটা সময় মানুষ বাংলাদেশে কোটিপতি বলতে একমাত্র জহুরুল ইসলামকেই চিনতো । বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না যে কে এই জহুরুল ইসলাম !
তিনি শুধু একজন সফল উদ্যোক্তা নন, বরং একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ, যিনি শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজসেবার ক্ষেত্রকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, সেই সময় তার সাহসী সিদ্ধান্ত ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেশের শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ করে।
আজকের দিনে ইসলাম গ্রুপ একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক কনগ্লোমারেট, যার প্রভাব শুধু অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং সমাজকল্যাণেও বিস্তৃত। তাই জহুরুল ইসলামের জীবন ও কর্মকে জানা মানে বাংলাদেশের ব্যবসায় উন্নয়ন ইতিহাসকে জানা।
জহুরুল ইসলামের জীবনী (ইসলাম গ্রুপ)
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
জহুরুল ইসলাম ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন বাজিতপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, যিনি সমাজসেবক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। পারিবারিক এই পরিবেশেই জহুরুল ইসলামের মানবিকতা, নেতৃত্বগুণ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
জহুরুল ইসলাম এর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছনে ফিরিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর পূর্বে । জনশ্রুতি আছে যে জহুরুল ইসলামের পূর্বপুরুষরা ছিলেন মুঘলদের কর্মকর্তা । হাতে খড়ি হয় স্থানীয় বাজিতপুর হাই স্কুলে । তারপর কলকাতা রিপন হাই স্কুল । শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অধ্যবসায়ী ও মেধাবী। গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে উঠলেও তিনি উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শিক্ষা জীবনের এই সময়ে তার ভেতরে নেতৃত্বের গুণ, সংগঠক মনোভাব এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে থাকে।
কলকাতা রিপন হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে তারপর তিনি ভর্তি হন বর্ধমানের একটি কলেজে । হিন্দু মুসলিম সাম্প্রতিক দাঙ্গার কারণে তিনি সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেননি। পুনরায় চলে আসেন পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে । বাংলাদেশে এসে ভর্তি হন মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে । কিন্তু পারিবারিক এবং অন্যান্য কারণে পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি এই ধনকুবের ।
শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অধ্যবসায়ী ও মেধাবী। গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে উঠলেও তিনি উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ঢাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন। শিক্ষা জীবনের এই সময়ে তার ভেতরে নেতৃত্বের গুণ, সংগঠক মনোভাব এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে থাকে।
এই শিক্ষাজীবনই তাকে ভবিষ্যতে এক দূরদর্শী উদ্যোক্তা হওয়ার পথে দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দেয়।
পরিবারিক শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি স্কুলজীবন থেকেই তার ভেতরে নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশ পেতে থাকে। শিক্ষকরা লক্ষ্য করেছিলেন, জহুরুল শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, বরং নতুন কিছু শেখার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল।
ঢাকার মতো নগর পরিবেশ তাকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সমাজজীবনের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এখানেই তিনি উপলব্ধি করেন, দেশের উন্নয়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যদিও তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন, কিন্তু জীবনের বিভিন্ন মোড়ে তার সিদ্ধান্তগুলো তাকে ব্যবসার জগতে নিয়ে আসে।
ব্যবসায় জগতে প্রবেশ
১৯৪৮ সালে ভারত ভাগের পর মাত্র ৮০ টাকা বেতনের চাকরি নেন সিএনবির ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে । একসময় সেখানে চাকরি ছেড়ে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন ঠিকাদারি ব্যবসা । সরকারি অফিসে বারোশো টাকার স্টেশনারি দিয়ে তার ঠিকাদারি ব্যবসার সূত্রপাত ঘটে । এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই ধন কুবের কে । ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করার দুই বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠেন দেশের প্রথম সারির ঠিকাদারদের একজন।
জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয় খুব অল্প বয়সেই। প্রথমদিকে তিনি কিছু ছোটখাটো ব্যবসায় জড়িত হন। ১৯৬০-এর দশকে, পাকিস্তান আমলে তিনি নির্মাণ শিল্পে কাজ শুরু করেন। সেই সময়ে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে, আর ঠিক তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন—নির্মাণ শিল্প ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি হবে।
তার প্রথম ব্যবসায়িক উদ্যোগ ছিল কনস্ট্রাকশন বা ঠিকাদারি ব্যবসা। ছোট কাজ দিয়ে শুরু হলেও, তার সততা, পরিশ্রম ও দূরদর্শিতার কারণে তিনি দ্রুত বড় বড় প্রকল্প হাতে নেন। ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরিতে তার প্রতিষ্ঠান অবদান রাখে।
এই সাফল্যের ভিত্তিতেই ধীরে ধীরে তিনি নতুন নতুন খাতে প্রবেশ করতে থাকেন। শুধু অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা নয়, বরং তিনি সবসময় এমন সেক্টরে বিনিয়োগ করেছেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। টেক্সটাইল, ব্যাংকিং, রিয়েল এস্টেট, স্বাস্থ্যসেবা—সবখানেই তার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯৮০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে “ইসলাম গ্রুপ” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গ্রুপকে কেন্দ্র করে তিনি তার সব ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড একীভূত করেন এবং এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনগ্লোমারেট গড়ে তোলেন।
ইসলাম গ্রুপের ইতিহাস ও সম্প্রসারণ
প্রতিষ্ঠাকাল ও উদ্দেশ্য
ইসলাম গ্রুপ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি আধুনিক ও বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যা দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। ১৯৮০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গ্রুপটি নির্মাণ শিল্পকে কেন্দ্র করেই কার্যক্রম শুরু করে।
তবে জহুরুল ইসলামের লক্ষ্য শুধু একটি খাতেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়। তিনি সবসময় ভাবতেন, “একটি দেশের উন্নয়ন হবে তখনই, যখন শিল্প-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাত সমানভাবে এগিয়ে যাবে।” এই চিন্তাধারাই তাকে নতুন নতুন খাতে প্রবেশে অনুপ্রাণিত করে।
ব্যবসার বহুমুখীকরণ
টেক্সটাইল শিল্প
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী খাত হলো তৈরি পোশাক শিল্প। জহুরুল ইসলাম অনেক আগেই বুঝেছিলেন, এই খাত ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস হয়ে উঠবে। তাই তিনি ইসলাম গ্রুপের অধীনে আধুনিক টেক্সটাইল কারখানা স্থাপন করেন।
ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স
১৯৮৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL)-এর অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে। এই ব্যাংক আজ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে একটি বড় নাম। পরে আরও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ইসলাম গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কনস্ট্রাকশন ও রিয়েল এস্টেট
ইসলাম গ্রুপের কনস্ট্রাকশন উইং বাংলাদেশের বহু বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। শুধু সরকারি প্রকল্প নয়, বেসরকারি আবাসন খাতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
স্বাস্থ্যসেবা
বাংলাদেশে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি পূরণে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপোলো হাসপাতাল (বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা)। এটি ছিল দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের প্রাইভেট হাসপাতাল, যা চিকিৎসা খাতে এক বিপ্লব ঘটায়।
ইসলাম গ্রুপের বর্তমান অবস্থা
আজ ইসলাম গ্রুপ শুধু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি প্রতীক। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে টেক্সটাইল, ব্যাংকিং, কনস্ট্রাকশন, স্বাস্থ্যসেবা, রিয়েল এস্টেটসহ প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই গ্রুপের মাধ্যমে।
জহুরুল ইসলামের অবদান
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান
জহুরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো—তিনি শুধু নিজের জন্য ব্যবসা করেননি, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ইসলাম গ্রুপ যে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছিল, তা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
১৯৮০–৯০-এর দশকে বাংলাদেশ যখন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন জহুরুল ইসলাম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ও টেক্সটাইল খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ইমেজকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তার নেতৃত্বাধীন টেক্সটাইল শিল্প শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেই ভূমিকা রাখেনি, বরং দেশের নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে দেয়। আজ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম, আর এর ভিত গড়ার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন জহুরুল ইসলাম।
সামাজিক কর্মকাণ্ড
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি যেমন পরিচিত, তেমনি সমাজসেবক হিসেবেও তার অবদান কম নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল।
-
শিক্ষা খাতে অবদান: তিনি গ্রামীণ অঞ্চলে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন এবং অসংখ্য মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করেন।
-
স্বাস্থ্য খাতে অবদান: তার প্রতিষ্ঠিত অ্যাপোলো হাসপাতাল (বর্তমান এভারকেয়ার ঢাকা) বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বহুমুখী হাসপাতাল, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়।
-
সমাজকল্যাণ: দুঃস্থদের সাহায্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ প্রদান, এবং বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ইসলাম গ্রুপের অংশগ্রহণ ছিল সবসময় সক্রিয়।
ব্যবসায়িক দর্শন ও নেতৃত্ব
উদ্যোক্তা হিসেবে দর্শন
জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়িক দর্শন ছিল “দেশের উন্নয়ন মানেই নিজের উন্নয়ন”। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন, একটি প্রতিষ্ঠান তখনই সফল হবে যখন তা দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে।
তিনি স্বল্পমেয়াদি লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ভিশনকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। এজন্য তিনি নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করতে ভয় পেতেন না, বরং সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ছিলেন।
নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য
একজন নেতা হিসেবে তার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল—
-
দূরদর্শিতা: আগেভাগেই সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করতে পারতেন।
-
কর্মীদের প্রতি আন্তরিকতা: তিনি বিশ্বাস করতেন কর্মীরাই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সম্পদ।
-
ঝুঁকি নেওয়ার সাহস: অন্যরা যেখানে দ্বিধায় পড়তেন, তিনি সেখানেই সুযোগ খুঁজে নিতেন।
এই গুণাবলির কারণেই ইসলাম গ্রুপ অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ কনগ্লোমারেটে পরিণত হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সাফল্য
ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ
জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়িক যাত্রা সবসময় মসৃণ ছিল না।
-
১৯৮০–৯০ দশকের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকট তাকে বহুবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
-
বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে, ছিল তীব্র।
-
বাংলাদেশে ব্যবসা করার নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাও তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবুও তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। প্রতিটি চ্যালেঞ্জকেই তিনি নতুন শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন।
উল্লেখযোগ্য সাফল্য
-
অ্যাপোলো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন অধ্যায়।
-
টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পে অবদান: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
-
ব্যাংকিং খাতে উদ্যোগ: ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্মে অবদান।
-
জাতীয় স্বীকৃতি: দেশের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসেবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্মাননা লাভ।
জহুরুল ইসলামের উত্তরাধিকার
পরিবার ও ব্যবসার ধারাবাহিকতা
জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার পরিবার ইসলাম গ্রুপ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তার সন্তান ও উত্তরসূরিরা গ্রুপের ব্যবসা ধরে রেখেছেন এবং নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী খাত সম্প্রসারণ করছেন।
যদিও নেতৃত্ব বদলেছে, কিন্তু এখনো প্রতিষ্ঠানটির মূল দর্শন রয়ে গেছে—দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা।
আজকের বাংলাদেশে তার প্রভাব
আজও উদ্যোক্তারা জহুরুল ইসলামকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখেন। তার জীবনকাহিনি প্রমাণ করে, সৎ উদ্দেশ্য, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে কীভাবে একজন ব্যক্তি একটি দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন।
বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার জীবন একটি পাঠশালা। তারা বুঝতে শেখে—ঝুঁকি নিলেও দৃঢ় মনোবল থাকলে সফলতা আসবেই।
উপসংহার
বাংলাদেশের ব্যবসায় ইতিহাসে জহুরুল ইসলামের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। তিনি ছিলেন এমন একজন দূরদর্শী উদ্যোক্তা, যিনি ব্যবসাকে শুধু লাভের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি; বরং এটিকে তিনি দেশের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ইসলাম গ্রুপের মাধ্যমে তিনি যে শক্ত ভিত্তি গড়ে গেছেন, তা আজও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। তার অবদান কেবল প্রতিষ্ঠান গড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি এক প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলেছেন।
বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অবদান আছে জহরুল ইসলামের । এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ সংসদ ভবন , বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন , হাইকোর্ট ভবন , সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং, এমপি হোস্টেল ছাড়াও দেশের অনেক বড় বড় প্রকল্পে কাজ করেছে জহুরুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ।
সংক্ষেপে বলা যায়, জহুরুল ইসলাম শুধু একজন ব্যবসায়ী ছিলেনা, বরং একজন জাতি-গড়ার কারিগর।