শেখ আকিজ উদ্দিন: ১৬ টাকায় আকিজ গ্রুপ গড়ার অবিশ্বাস্য গল্প

শেখ আকিজ উদ্দিন: ১৬ টাকায় আকিজ গ্রুপ গড়ার অবিশ্বাস্য গল্প

শেখ আকিজ উদ্দিন: ১৬ টাকায় আকিজ গ্রুপ গড়ার অবিশ্বাস্য গল্প

Table of Contents

ভূমিকা: একজন স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তার পথচলার সূচনা

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

মাত্র ১৬ টাকা পুঁজি নিয়ে যে সংগ্রামী জীবনের শুরু, তা কীভাবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ‘আকিজ গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠায় রূপ নিলো? শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবন শুধু একজন ব্যবসায়ীর সফলতার গল্প নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। এটি এমন এক মহাকাব্য, যার প্রতিটি অধ্যায়ে লুকিয়ে আছে সংগ্রাম, স্বপ্ন আর ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য স্পৃহা। যে মানুষটি জীবনের কঠিন বাস্তবতায় শৈশবে রাখাল বালক হিসেবে কাজ করেছেন, খাবারের জন্য অন্যের জমিতে দিনমজুর খেটেছেন, তিনিই পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের শিল্পজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো আজ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে, কর্মসংস্থান জুগিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা কোনো সাধারণ ব্যবসায়ীর জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করবো না। আমরা ডুব দেবো এক কিংবদন্তির জীবনের গভীরতম অধ্যায়ে। জানবো, কীভাবে খুলনার এক অখ্যাত গ্রামের সাধারণ বালক থেকে তিনি হয়ে উঠলেন কিংবদন্তি শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিন। আমরা তার জীবনের প্রতিটি বাঁক—তার শৈশবের সংগ্রাম, ব্যবসার জগতে প্রথম পদক্ষেপ, আকিজ গ্রুপের বিস্ময়কর বিস্তার এবং দেশের প্রতি তার অসামান্য অবদান—খুঁজে দেখব। এই লেখাটি কেবল তার সাফল্যের খতিয়ান নয়, বরং তার দর্শন, তার মানবিকতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া অনুপ্রেরণার এক দলিল। চলুন, শুরু করা যাক সেই অবিশ্বাস্য যাত্রার গল্প, যা প্রমাণ করে—স্বপ্ন দেখার সাহস আর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে শূন্য থেকেও শিখরে পৌঁছানো সম্ভব।

জন্ম ও কঠিন শৈশব: প্রতিকূলতার মধ্যেই স্বপ্নের বীজবপন

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

প্রত্যেক মহীরুহের পেছনে থাকে একটি ক্ষুদ্র বীজের গল্প, যে বীজ প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে মাটি ভেদ করে অঙ্কুরিত হয়। শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনের গল্পটিও ঠিক তেমনই। তার শৈশব কোনো রূপকথার গল্প ছিল না; বরং তা ছিল কঠিন বাস্তবতা আর নির্মম দারিদ্র্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই প্রতিকূলতাই তার ভেতরের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করেছিল, যা তাকে পরবর্তী জীবনে পথ দেখিয়েছে।

এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম এবং কঠিন বাস্তবতা

১৯২৯ সাল। খুলনা জেলার ফুলতলা থানার মধ্যডাঙ্গা গ্রামের এক অতি সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শেখ আকিজ উদ্দিন। তার বাবা শেখ মফিজ উদ্দিন ছিলেন একজন ক্ষুদ্র মৌসুমী ব্যবসায়ী, আর মা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। তাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা ছিল। শৈশব থেকেই আকিজ উদ্দিন দারিদ্র্যের নির্মম রূপ খুব কাছ থেকে দেখেছেন। যে বয়সে অন্য শিশুরা খেলাধুলা আর পড়াশোনায় মগ্ন থাকে, সেই বয়সে তাকে ভাবতে হয়েছে পরিবারের খাবারের কথা।

তার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে মাত্র চার বছর বয়সে। তিনি তার স্নেহময়ী মাকে হারান। মাতৃহীন শৈশব তার জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে। সৎমায়ের সংসারে তার জীবন ছিল অবহেলা আর বঞ্চনায় ভরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ থাকলেও, সেই সুযোগ তিনি পাননি। গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হলেও দারিদ্র্যের কষাঘাতে তার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। বাবার সঙ্গে তাকে কৃষিকাজে এবং ছোটখাটো ব্যবসায় সাহায্য করতে হতো। কখনো অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন, কখনো বা রাখাল বালক হিসেবে গরু চরিয়েছেন। জীবন তাকে পুঁথিগত বিদ্যার চেয়েও বড় শিক্ষা দিয়েছিল—কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসই হলো টিকে থাকার একমাত্র উপায়। এই কঠিন শৈশবই তার মধ্যে এক সংগ্রামী চেতনা তৈরি করে, যা তাকে শিখিয়েছিল যে ভাগ্যকে নিজের হাতেই গড়তে হয়।

মাত্র ১৬ টাকা পুঁজি: এক ঐতিহাসিক যাত্রার শুরু

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

 

কৈশোরেই শেখ আকিজ উদ্দিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ছোট গ্রামে থেকে তার বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তার বাবা চাইতেন তিনি কৃষিকাজ বা ছোটখাটো ব্যবসা করে গ্রামেই জীবন কাটান। কিন্তু আকিজ উদ্দিনের স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। তিনি নিজের মতো করে কিছু করতে চেয়েছিলেন। এই নিয়ে বাবার সাথে তার প্রায়ই মতবিরোধ হতো। অবশেষে ১৯৪২ সাল, মাত্র ১৩ বছর বয়সে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বাবার ওপর অভিমান করে এবং নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মাত্র ১৬ টাকা পকেটে পুরে বেরোলেন অজানার পথে।

তার গন্তব্য ছিল কলকাতা—তৎকালীন সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। কোনো এক ভোরে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে বসেন কলকাতার উদ্দেশ্যে। অচেনা শহর, অজানা পরিবেশ, সঙ্গে নেই কোনো পরিচিত মুখ। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে তিনি যেন এক অথৈ সাগরে পড়লেন। থাকার কোনো জায়গা নেই, খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাতের পর রাত তার কেটেছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে, অনাহারে-অর্ধাহারে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। বেঁচে থাকার তাগিদে এবং স্বপ্ন পূরণের নেশায় তিনি যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন।

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

কলকাতায় তিনি প্রথমে ফলের পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন। আলমগীর নামে এক ব্যবসায়ীর আড়তে তিনি কাজ নেন। তার কাজ ছিল আড়ত থেকে ফল কিনে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করা। সারাদিন কমলালেবু বিক্রি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে কোনোমতে তার খাবার খরচ চলত। এই সময় তিনি শিখেছিলেন ব্যবসার মূলনীতি—কীভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে হয়। এরপর তিনি একটি হোটেলে বয় হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রতিটি কাজই তিনি করেছেন অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। কলকাতার এই কঠিন জীবন তাকে বাস্তবতার মুখোমুখি করেছিল এবং শিখিয়েছিল কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে নিজের পথ তৈরি করতে হয়। এই শহরই তার ভেতরের ব্যবসায়ী সত্ত্বাকে প্রথম জাগ্রত করে।

ব্যবসার জগতে প্রথম পদক্ষেপ: বিড়ি শিল্প দিয়ে উত্থান

 

কলকাতার জীবন শেখ আকিজ উদ্দিনকে শুধু কষ্টই দেয়নি, দিয়েছিল এক নতুন স্বপ্ন দেখার দিশা। শহরের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি একটি বিষয় লক্ষ্য করেন—বিড়ির ব্যবসা। তিনি দেখলেন, খুব অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা যায় এবং এর চাহিদাও প্রচুর। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিড়ির ব্যাপক প্রচলন দেখে তিনি এই ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। তার মনে হলো, এই ব্যবসাই হতে পারে তার ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি। তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন, একদিন তার নিজের একটি বিড়ির কারখানা হবে।

বিড়ি ব্যবসার সূচনা এবং প্রথম কারখানা স্থাপন

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

কলকাতায় দুই বছর থাকার পর তিনি কিছু টাকা জমিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু তার মন পড়েছিল ব্যবসার দিকে। তিনি তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তিনি বিড়ির ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথমে তিনি পাইকারি দোকান থেকে বিড়ি কিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন, এভাবে অন্যের তৈরি বিড়ি বিক্রি করে বেশি লাভ করা সম্ভব নয়। লাভ করতে হলে নিজের কারখানা থাকতে হবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিনি তামাক ও পাতা কিনে এনে নিজ হাতে বিড়ি তৈরি শুরু করলেন। তার প্রথম “কারখানা” ছিল তার বাড়িরই একটি অংশ। কোনো শ্রমিক ছিল না, তিনিই ছিলেন একমাত্র কারিগর। দিনের বেলা তিনি বিড়ি তৈরি করতেন আর বিকেলে সেগুলো বিক্রি করার জন্য বেরিয়ে পড়তেন। তিনি তার তৈরি বিড়ির একটি নাম দিলেন—”আকিজ বিড়ি”। নিজের নামকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, শুরু থেকেই তার মধ্যে এক দূরদর্শী ব্যবসায়িক মানসিকতা ছিল। তার সততা এবং ভালো মানের কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই “আকিজ বিড়ি” স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।

বাঁধা-বিপত্তি ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

সাফল্যের পথ কখনোই মসৃণ হয় না। শেখ আকিজ উদ্দিনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ব্যবসার প্রসার দেখে স্থানীয় প্রভাবশালী বিড়ি ব্যবসায়ীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। তারা তাকে ব্যবসা থেকে হটানোর জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। ব্রিটিশ আমলের পুলিশ এবং আবগারি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। তারা প্রায়ই তার কারখানায় হানা দিত, তাকে নানাভাবে হয়রানি করত। একদিন এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তার ছোট কারখানাটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার আজীবনের স্বপ্ন, তার কঠোর পরিশ্রমের ফসল—সবকিছু যেন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল।

এই ঘটনায় তিনি সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেও হতাশ হননি। তার ভেতরের সংগ্রামী সত্ত্বা তাকে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি বুঝতে পারলেন, এই প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা কঠিন। তাই তিনি তার জন্মস্থান ছেড়ে যশোরের নাভারনে চলে আসেন। সেখানে তিনি নতুন করে সবকিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সততা এবং ভালো কাজের সুনাম ততদিনে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই নাভারনে তিনি সহজেই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং নিজের জমানো সামান্য পুঁজি দিয়ে তিনি আবারও বিড়ির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

এবার তিনি আরও সতর্ক এবং সংগঠিত ছিলেন। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার ব্যবসাকে আবারও দাঁড় করালেন। গুণগত মানের সাথে কোনো আপস না করায় “আকিজ বিড়ি” আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ধীরে ধীরে তার ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে এবং তিনি কারখানায় আরও শ্রমিক নিয়োগ দেন। এই কঠিন সময় তাকে শিখিয়েছিল যে, ব্যবসায়িক জীবনে বাঁধা আসবেই, কিন্তু সততা ও অধ্যবসায় দিয়ে সেই বাঁধাকে অতিক্রম করে গেলেই প্রকৃত সাফল্য অর্জন করা যায়। এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পই ছিল তার ভবিষ্যৎ শিল্প সাম্রাজ্য ‘আকিজ গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সোপান।

আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠা ও শিল্পের বহুমুখীকরণ

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

নাভারনে বিড়ির ব্যবসায় স্থিতিশীলতা আসার পর শেখ আকিজ উদ্দিনের স্বপ্ন আরও বড় হতে শুরু করে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, একটি মাত্র ব্যবসার ওপর নির্ভর করে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য ব্যবসার বহুমুখীকরণ অপরিহার্য। তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং ঝুঁকি নেওয়ার সাহসই তাকে বিড়ি শিল্পের গণ্ডি পেরিয়ে এক বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই অধ্যায়টিই মূলত ‘আকিজ গ্রুপ’ নামক মহীরুহের জন্ম ও বিকাশের গল্প।

এক শিল্প থেকে বহু শিল্পে পদার্পণ

শেখ আকিজ উদ্দিন ছিলেন একজন জাত ব্যবসায়ী। তিনি সবসময় নতুন সুযোগের সন্ধানে থাকতেন। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন তার বিড়ির ব্যবসা বেশ লাভজনক অবস্থায়, তখন তিনি নতুন শিল্পে বিনিয়োগের কথা ভাবতে শুরু করেন। তিনি শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা করতেন না, বরং দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতেন। তার এই চিন্তাধারাই তাকে বিভিন্ন শিল্পে প্রবেশের পথ দেখায়।

তার প্রথম বড় পদক্ষেপ ছিল পাট শিল্পে প্রবেশ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিতে পাটের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। পাটকে বলা হতো ‘সোনালী আঁশ’। শেখ আকিজ উদ্দিন এই সোনালী আঁশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইলেন। ১৯৬০ সালে তিনি যশোরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আকিজ জুট মিলস লিমিটেড’। এটি ছিল তার প্রথম বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং এখান থেকেই আকিজ গ্রুপের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ভিত্তি স্থাপিত হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে তিনি প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং, টেক্সটাইল, চামড়া এবং তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি তার সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং গুণগত মানের দর্শনকে কাজে লাগিয়েছেন, যা তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশের শিল্পায়নে আকিজ গ্রুপের অগ্রযাত্রা

 

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন পুনর্গঠনের পথে, তখন শেখ আকিজ উদ্দিনের মতো উদ্যোক্তারাই দেশের শিল্পায়নের চাকাকে সচল রেখেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ভারী শিল্পের প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই তিনি সিমেন্ট, সিরামিকস, পার্টিকেল বোর্ড এবং খাদ্য ও পানীয়র মতো খাতে বিনিয়োগ শুরু করেন।

নির্মাণ শিল্পে তার প্রবেশ ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘আকিজ সিমেন্ট’, যা খুব দ্রুতই গুণগত মানের জন্য বাজারে সুনাম অর্জন করে এবং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর আসে ‘আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড’। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ভোক্তাদের জন্য নিয়ে আসেন মোজো, লেমু, ক্লিয়ার, স্পিড এবং ফ্রুটিকা-এর মতো জনপ্রিয় সব পানীয়, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতে শুরু করে।

তার সাফল্যের তালিকা এখানেই শেষ নয়। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আকিজ সিরামিকস, আকিজ পার্টিকেল বোর্ড, আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি, আকিজ ফার্মাসিউটিক্যালস, আকিজ প্লাস্টিকসসহ প্রায় দুই ডজনেরও বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই নিজ নিজ খাতে অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করে আছে। শেখ আকিজ উদ্দিনের হাত ধরে একটি ছোট বিড়ির ব্যবসা থেকে যে আকিজ গ্রুপের জন্ম, তা আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তার এই অগ্রযাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের শিল্পায়নের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

শেখ আকিজ উদ্দিনের ব্যবসায়িক দর্শন ও মানবিকতা

শেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপ

শেখ আকিজ উদ্দিনকে কেবল একজন সফল শিল্পপতি হিসেবে দেখলে তার চরিত্রের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন হয় না। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান মানুষ, যার ব্যবসায়িক দর্শন এবং মানবিক গুণাবলী ছিল অসাধারণ। তার সাফল্য কেবল অর্থ বা সম্পদের পাহাড় গড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তা ছিল সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য সমন্বয়। তার এই দর্শনই আকিজ গ্রুপকে একটি নিছক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে এক মানবিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছে।

সততা, গুণগত মান এবং কঠোর পরিশ্রমের মূলমন্ত্র

শেখ আকিজ উদ্দিনের ব্যবসার মূল ভিত্তি ছিল তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত: সততা, গুণগত মান এবং কঠোর পরিশ্রম। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, “সততাই ব্যবসার মূলধন”। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ব্যবসায়িক লেনদেনে তিনি এই নীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তার সততার কারণেই তিনি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলেন, যা তার ব্যবসার প্রসারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

দ্বিতীয়ত, তিনি পণ্যের গুণগত মানের সাথে কখনো আপস করেননি। তার মূলমন্ত্র ছিল, ক্রেতাকে সেরা পণ্যটি দিতে হবে। ‘আকিজ বিড়ি’ থেকে শুরু করে ‘আকিজ সিমেন্ট’ পর্যন্ত প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার জন্য নিজে তদারকি করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, “ব্যবসা একদিনের জন্য নয়, ব্যবসা প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য।” এই দীর্ঘমেয়াদী চিন্তার কারণেই তিনি গুণগত মানকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

তৃতীয়ত, তার মতো পরিশ্রমী মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি ছিলেন একজন অক্লান্ত কর্মী। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি কারখানায় সময় কাটাতেন। তিনি শুধু নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, নিজে কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতেন। তার এই কঠোর পরিশ্রমই তার অধীনস্থ কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল। তিনি প্রমাণ করেছেন, মেধা বা পুঁজির চেয়েও কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের জন্য বেশি জরুরি।

কর্মীদরদী ব্যবস্থাপক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা

শেখ আকিজ উদ্দিনের মানবিকতার সবচেয়ে বড় পরিচয় পাওয়া যায় তার কর্মী ব্যবস্থাপনায় এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে। তিনি তার লক্ষাধিক কর্মীকে কখনো নিছক শ্রমিক ভাবতেন না, ভাবতেন নিজের পরিবারের সদস্য। তাদের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধার প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি ছিল। কর্মীদের জন্য তিনি বাসস্থান, চিকিৎসা এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তার কারখানায় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ, যা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।

ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার কথা কখনো ভোলেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজের কাছ থেকে যা অর্জন করেছি, তা সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়া আমার দায়িত্ব। এই দর্শন থেকেই তিনি তার আয়ের একটি বড় অংশ মানবকল্যাণে ব্যয় করতেন। তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ‘আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা। স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। আদ্-দ্বীন হাসপাতাল আজ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র।

এছাড়াও তিনি অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবসময় ছিলেন অগ্রগামী। শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবন ও কর্ম একথাই প্রমাণ করে যে, একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি একজন মহান মানুষ হওয়াও সম্ভব। তার রেখে যাওয়া মানবিকতার আদর্শই তাকে অমর করে রেখেছে।

উত্তরাধিকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট: একটি কিংবদন্তির রেখে যাওয়া (Legacy)

২০০৬ সালে শেখ আকিজ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করলেও তার কীর্তি ও আদর্শ আজও অম্লান। তিনি শুধু একটি বিশাল শিল্পগোষ্ঠী রেখে যাননি, রেখে গেছেন এক অসামান্য উত্তরাধিকার—যা সততা, পরিশ্রম এবং দেশপ্রেমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার দেখানো পথেই আজ আকিজ গ্রুপ সাফল্যের নতুন নতুন শিখরে আরোহণ করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

দেশের অর্থনীতিতে আকিজ গ্রুপের অবদান

শেখ আকিজ উদ্দিনের হাতে গড়া আকিজ গ্রুপ আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এই শিল্পগোষ্ঠী দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ আকিজ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, যা দেশের বেকারত্ব সমস্যা হ্রাসে বিশাল ভূমিকা পালন করছে।

আকিজ গ্রুপ দেশের অন্যতম শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে তারা জাতীয় উন্নয়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া, আকিজ গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য—যেমন সিমেন্ট, সিরামিকস, খাদ্য ও পানীয়, পাটজাত পণ্য—বিদেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এক কথায়, আকিজ গ্রুপ আজ বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনকাহিনী যেকোনো aspiring উদ্যোক্তার জন্য এক অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। মাত্র ১৬ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করে কীভাবে একটি শিল্প সাম্রাজ্য গড়ে তোলা যায়, তার জীবন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তার শূন্য থেকে শিখরে আরোহণের গল্প তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে।

তিনি যে আদর্শ রেখে গেছেন—সততার সাথে ব্যবসা করা, গুণগত মানের প্রতি অবিচল থাকা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা—তা আজকের ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তার সুযোগ্য সন্তানদের নেতৃত্বে আকিজ গ্রুপ আজও সেই আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। শেখ আকিজ উদ্দিন শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও, তার দর্শন ও কর্মের মাধ্যমে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তিনি শুধু একজন শিল্পপতি নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক, একজন কিংবদন্তি, যিনি তার জীবন দিয়ে শিখিয়েছেন—ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।

উপসংহার: একজন শিল্পপতির অমর কীর্তি

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবন ছিল এক মহাকাব্যিক যাত্রা। এটি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক তরুণের লড়াই, প্রতিকূলতার মুখে এক ব্যবসায়ীর ঘুরে দাঁড়ানো এবং দেশ ও মানুষের প্রতি এক শিল্পপতির ভালোবাসার গল্প। তিনি শুধু ইট-সিমেন্টের কারখানা তৈরি করেননি, তিনি তৈরি করেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য। তার হাতে গড়া আকিজ গ্রুপ আজ বাংলাদেশের গর্ব, তার প্রতিষ্ঠিত আদ্-দ্বীন হাসপাতাল লক্ষ মানুষের সেবাকেন্দ্র।

তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা বংশগত ঐতিহ্য ছাড়াই কেবল সততা, কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো সম্ভব। তার জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের শিল্পায়নের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শেখ আকিজ উদ্দিন শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন визионер, একজন মানবদরদী এবং একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যার কীর্তি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ Section)

শেখ আকিজ উদ্দিনের জন্ম কোথায়?

শেখ আকিজ উদ্দিন ১৯২৯ সালে খুলনা জেলার ফুলতলা থানার মধ্যডাঙ্গা গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

আকিজ গ্রুপ কোন ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করে?

আকিজ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিড়ি ব্যবসার মাধ্যমে। শেখ আকিজ উদ্দিন নিজ হাতে তৈরি “আকিজ বিড়ি” দিয়ে তার ব্যবসায়িক জীবনের সূচনা করেন।

আকিজ গ্রুপের কয়েকটি জনপ্রিয় পণ্যের নাম কী?

আকিজ গ্রুপের কয়েকটি জনপ্রিয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে আকিজ সিমেন্ট, আকিজ সিরামিকস এবং আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মোজো, লেমু, স্পিড ও ফ্রুটিকার মতো পানীয়।

শেখ আকিজ উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত প্রধান সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নাম কী?

তার প্রতিষ্ঠিত প্রধান সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলো ‘আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন’, যা স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশব্যাপী পরিচিত।

আকিজ গ্রুপ বর্তমানে কোন কোন শিল্পে ব্যবসা পরিচালনা করছে?

আকিজ গ্রুপ বর্তমানে পাট, সিমেন্ট, সিরামিকস, খাদ্য ও পানীয়, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংসহ দুই ডজনেরও বেশি শিল্পে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

Leave a Comment

সম্পর্কিত পোস্টসমূহ

আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Scroll to Top