বিল গেটস: প্রযুক্তি বিশ্বের এক কিংবদন্তীর উত্থান এবং মানবকল্যাণে তাঁর যাত্রা
ভূমিকা
কীভাবে একজন কলেজ ড্রপআউট ছাত্র বিশ্বের প্রযুক্তি মানচিত্র চিরতরে বদলে দিলেন এবং পরবর্তীতে নিজেকে মানবকল্যাণে উৎসর্গ করলেন? এই প্রশ্নটি শুনলে যে মানুষটির ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তিনি বিল গেটস। তিনি কেবল মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি-কে প্রতিটি বাড়ির টেবিলে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর হাত ধরেই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় এসেছে এবং ডিজিটাল বিপ্লবের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
বিল গেটসের জীবন কাহিনী কেবল একজন সফল ব্যবসায়ীর গল্প নয়, এটি উদ্ভাবন, দূরদৃষ্টি, আপসহীন মনোভাব এবং চূড়ান্ত সফলতার পর নিজের সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করার এক মহাকাব্য। যে মানুষটি একসময় সফটওয়্যারের দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, তিনিই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো, যেমন—চরম দারিদ্র্য এবং সংক্রাক রোগ নির্মূল করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই পোস্টে আমরা বিল গেটসের জীবনের গভীরে ডুব দেব। তাঁর সাধারণ শৈশব থেকে শুরু করে হার্ভার্ডের সেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, মাইক্রোসফটের মতো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাঁর পরোপকারী কার্যক্রম—প্রতিটি অধ্যায় আমরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব। চলুন, শুরু করা যাক সেই কিংবদন্তীর যাত্রা, যিনি কেবল কোড দিয়ে নয়, তাঁর কর্ম দিয়েও পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন।
প্রারম্ভিক জীবন এবং কম্পিউটারের প্রতি অদম্য অনুরাগ
প্রতিটি মহীরুহের পেছনে যেমন একটি বীজ থাকে, তেমনি বিল গেটসের প্রযুক্তি বিশ্বে বিচরণের পেছনেও ছিল তাঁর শৈশবের অদম্য কৌতূহল এবং কম্পিউটারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। তাঁর বেড়ে ওঠা, পারিবারিক শিক্ষা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগের সদ্ব্যবহার তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিল।
শৈশব, পরিবার এবং শিক্ষাজীবন
১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে উইলিয়াম হেনরি গেটস III, যিনি বিল গেটস নামে পরিচিত, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা, উইলিয়াম এইচ. গেটস সিনিয়র, ছিলেন একজন স্বনামধন্য আইনজীবী এবং মা, মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস, ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং পরবর্তীতে একাধিক কর্পোরেট বোর্ডের সদস্য। গেটস পরিবারে প্রতিযোগিতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার একটি আবহ ছিল। তাঁরা প্রায়ই বিভিন্ন বোর্ড গেম এবং কার্ড খেলতেন, যা শৈশব থেকেই বিলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার জন্ম দেয়।
তেরো বছর বয়সে তাঁকে সিয়াটলের সবচেয়ে प्रतिष्ठित বেসরকারি স্কুল—লেকসাইড স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেই সময়ে, অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে, একটি স্কুল কম্পিউটার থাকা ছিল প্রায় অকল্পনীয়। কিন্তু লেকসাইড স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি টেলিটাইপ মডেল ৩৩ টার্মিনাল ক্রয় করে, যা জেনারেল ইলেকট্রিক (GE) কম্পিউটারের টাইম-শেয়ারিং সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত ছিল। এই ঘটনাই বিল গেটসের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা এই যন্ত্রটির প্রেমে পড়ে যান। দিনের পর দিন, এমনকি রাতের ঘুম নষ্ট করেও তাঁরা কম্পিউটার রুমে পড়ে থাকতেন, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ‘বেসিক’ (BASIC) শিখতেন এবং কোডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন।
পল অ্যালেনের সাথে বন্ধুত্ব এবং প্রোগ্রামিং-এর জগতে প্রবেশ
লেকসাইড স্কুলেই বিল গেটসের সাথে পরিচয় হয় পল অ্যালেনের, যিনি তাঁর থেকে দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন। কম্পিউটারের প্রতি দুজনেরই ছিল সমান আবেগ এবং এই مشترک আবেগ থেকেই তাঁদের মধ্যে এক গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে প্রযুক্তি বিশ্বে বিপ্লব এনেছিল। তাঁরা একসাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতেন, ম্যানুয়াল পড়তেন এবং নিজেদের তৈরি করা বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালাতেন।
তাঁদের প্রতিভা এবং দুষ্টুমির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো, তাঁরা স্কুলের কম্পিউটার সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেদের জন্য অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারের সময় বরাদ্দ করতেন। এই অপরাধে ধরা পড়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কম্পিউটার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তাঁদের প্রতিভা নষ্ট হতে দেননি শিক্ষকরা। কিছুদিন পরেই সেই কম্পিউটার সরবরাহকারী সংস্থা, কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন (CCC), তাঁদের সিস্টেমের ভুলত্রুটি এবং দুর্বলতা খুঁজে বের করার জন্য গেটস এবং অ্যালেনকে নিয়োগ দেয়। এর বিনিময়ে তাঁরা বিনামূল্যে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পান। এটি ছিল তাঁদের জীবনের প্রথম পেশাগত অভিজ্ঞতা।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে, পল অ্যালেনের সাথে মিলে বিল গেটস তাঁর প্রথম বাণিজ্যিক উদ্যোগ ‘Traf-O-Data’ শুরু করেন। এটি ছিল এমন একটি যন্ত্র যা রাস্তার ট্র্যাফিক কাউন্টারের ডেটা বিশ্লেষণ করে ট্র্যাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় রিপোর্ট তৈরি করত। যদিও এই উদ্যোগটি ব্যবসায়িকভাবে খুব বেশি সফল হয়নি, কিন্তু এটি তাঁদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছিল এবং শিখিয়েছিল কীভাবে একটি প্রযুক্তিগত ধারণা থেকে ব্যবসায়িক পণ্য তৈরি করতে হয়।
হার্ভার্ডের দিনগুলো এবং এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
স্কুল শেষ করার পর বিল গেটস দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে ভর্তি হন। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তাঁর মন পড়ে থাকত কম্পিউটার ল্যাবে। তিনি ক্লাসের চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন প্রোগ্রামিং এবং অ্যালগরিদম নিয়ে।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাস। হার্ভার্ডের ছাত্রাবাসে বসে পল অ্যালেন একটি ম্যাগাজিন নিয়ে দৌড়ে আসেন বিল গেটসের কাছে। ম্যাগাজিনটির নাম ছিল ‘পপুলার ইলেকট্রনিক্স’ এবং এর প্রচ্ছদে ছিল বিশ্বের প্রথম মাইক্রোকম্পিউটার ‘Altair 8800’-এর ছবি। সেই ছবিটি দেখেই তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, কম্পিউটার শিল্পে এক বিশাল বিপ্লব ঘটতে চলেছে। তাঁরা অনুধাবন করেন যে, এই পার্সোনাল কম্পিউটারগুলো ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাবে, কিন্তু সেগুলো চালানোর জন্য প্রয়োজন হবে সফটওয়্যারের। আর এখানেই ছিল তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ।
তাঁরা Altair 8800-এর নির্মাতা সংস্থা MITS (Micro Instrumentation and Telemetry Systems)-কে ফোন করে একটি দুঃসাহসিক দাবি করেন। তাঁরা বলেন, “আমরা আপনাদের Altair কম্পিউটারের জন্য একটি বেসিক (BASIC) ইন্টারপ্রেটার তৈরি করেছি।” বাস্তবতা হলো, তখন পর্যন্ত তাঁরা এক লাইন কোডও লেখেননি। MITS তাঁদেরকে ডেমো দেখানোর জন্য আমন্ত্রণ জানালে, গেটস এবং অ্যালেন পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ দিনরাত এক করে হার্ভার্ডের কম্পিউটার ল্যাবে সেই সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। পল অ্যালেন যখন ডেমো দেওয়ার জন্য আলবাকার্কি, নিউ মেক্সিকোতে যান, তখন পর্যন্ত তাঁরা Altair মেশিনে সফটওয়্যারটি পরীক্ষা করার সুযোগ পাননি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাঁদের প্রোগ্রামটি প্রথমবারেই নিখুঁতভাবে কাজ করে।
এই অভাবনীয় সাফল্যের পর বিল গেটস তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নেন। তিনি বুঝতে পারেন, সফটওয়্যার বিপ্লবের এই ট্রেন তিনি হারাতে চান না। তাই মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন এবং পল অ্যালেনের সাথে মিলে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য নিউ মেক্সিকোতে পাড়ি জমান। সেই কোম্পানির নাম ছিল ‘মাইক্রো-সফট’ (Micro-Soft), যা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে প্রযুক্তি বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি ‘মাইক্রোসফট’।
মাইক্রোসফটের জন্ম: পার্সোনাল কম্পিউটিং বিপ্লবের সূচনা
হার্ভার্ড ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল একটি বিশাল ঝুঁকি, কিন্তু বিল গেটসের দূরদৃষ্টি এবং আত্মবিশ্বাস সেই ঝুঁকিকে এক ঐতিহাসিক সুযোগে পরিণত করেছিল। আলবাকার্কির একটি ছোট অফিস থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা কয়েক দশকের মধ্যে পার্সোনাল কম্পিউটিং (পিসি) বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং মাইক্রোসফটকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে।
Altair BASIC: মাইক্রোসফটের প্রথম বড় সাফল্য
MITS-এর সাথে সফল চুক্তির পর Altair BASIC মাইক্রোসফটের প্রথম আনুষ্ঠানিক পণ্য হিসেবে বাজারে আসে। এটিই ছিল কোম্পানির ভিত্তিপ্রস্তর। বিল গেটস এবং পল অ্যালেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের ভবিষ্যৎ সফটওয়্যারের সাথেই জড়িত। তবে শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। সেই সময়ে সফটওয়্যার কেনা-বেচার ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত ছিল না। অনেক কম্পিউটার ব্যবহারকারী বিনামূল্যে একে অপরের সাথে সফটওয়্যার শেয়ার করত। এই বিষয়টি নিয়ে বিল গেটস এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে, ১৯৭৬ সালে তিনি কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখেন, যার শিরোনাম ছিল “An Open Letter to Hobbyists”। এই চিঠিতে তিনি সফটওয়্যার পাইরেসির তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন যে, ভালো মানের সফটওয়্যার তৈরি করতে হলে ডেভেলপারদের পারিশ্রমিক দিতে হবে। এই চিঠিটি সফটওয়্যারকে একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
MS-DOS এবং IBM-এর সাথে ঐতিহাসিক চুক্তি
সত্তরের দশকের শেষের দিকে মাইক্রোসফট নিউ মেক্সিকো থেকে তাঁদের নিজেদের শহর ওয়াশিংটনের বেলভিউতে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু কোম্পানির ভাগ্য বদলে দেওয়া ঘটনাটি ঘটে ১৯৮০ সালে, যখন সেই সময়ের প্রযুক্তি জগতের দানব IBM (International Business Machines) পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। IBM তাদের নতুন পিসির জন্য একটি অপারেটিং সিস্টেম (OS) খুঁজছিল এবং তারা মাইক্রোসফটের কাছে আসে।
সেই মুহূর্তে মাইক্রোসফটের নিজস্ব কোনো অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। কিন্তু বিল গেটস সুযোগটি হাতছাড়া করেননি। তিনি পাশের শহর সিয়াটলের একটি ছোট কোম্পানি, সিয়াটল কম্পিউটার প্রোডাক্টস (SCP)-এর খোঁজ পান, যারা ‘QDOS’ (Quick and Dirty Operating System) নামে একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছিল। মাইক্রোসফট কালবিলম্ব না করে মাত্র ৫০,০০০ ডলারে QDOS কিনে নেয়। এরপর তাঁরা সেটিকে আরও উন্নত করে নাম দেয় MS-DOS (Microsoft Disk Operating System)।
এখানেই বিল গেটস তাঁর জীবনের সেরা ব্যবসায়িক চালটি দেন। তিনি IBM-কে MS-DOS পুরোপুরি বিক্রি না করে, একটি লাইসেন্সিং চুক্তি করেন। এই চুক্তির মূল শর্ত ছিল, IBM তাদের প্রতিটি পিসিতে MS-DOS ব্যবহার করার জন্য মাইক্রোসফটকে একটি নির্দিষ্ট রয়্যালটি দেবে, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমের মূল মালিকানা মাইক্রোসফটের হাতেই থাকবে। এর ফলে মাইক্রোসফট অন্যান্য কম্পিউটার প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছেও MS-DOS লাইসেন্স করার অধিকার রাখে। IBM-এর পিসি বাজারে আসার পর অন্যান্য কোম্পানিগুলোও ‘IBM কমপ্যাটিবল’ কম্পিউটার তৈরি করা শুরু করে এবং তাদের সবারই একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। মাইক্রোসফট সেই চাহিদা পূরণ করে এবং MS-DOS খুব দ্রুত পিসি জগতের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম হয়ে ওঠে। এই একটি চুক্তিই মাইক্রোসফটকে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
উইন্ডোজের উন্মোচন: বিশ্বকে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস প্রদান
MS-DOS অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও এটি ছিল কমান্ড-লাইন ভিত্তিক। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন কমান্ড টাইপ করে কম্পিউটার চালাতে হতো, যা সাধারণ মানুষের জন্য ছিল বেশ কঠিন। বিল গেটস বুঝতে পেরেছিলেন যে, কম্পিউটিংকে সহজ করতে হলে একটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস বা GUI প্রয়োজন, যেখানে ব্যবহারকারীরা মাউস দিয়ে আইকনে ক্লিক করে কাজ করতে পারবে।
অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ (Macintosh) কম্পিউটারের GUI দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৯৮৫ সালে তারা ‘উইন্ডোজ ১.০’ (Windows 1.0) বাজারে আনে। এটি MS-DOS-এর উপরে চলা একটি গ্রাফিক্যাল শেল ছিল। প্রথম সংস্করণটি খুব একটা সাফল্য পায়নি, কিন্তু মাইক্রোসফট হাল ছাড়েনি। বেশ কয়েকটি সংস্করণের পর, ১৯৯০ সালে ‘উইন্ডোজ ৩.০’ বাজারে আসে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তবে মাইক্রোসফটের আসল জয় আসে ১৯৯৫ সালে ‘উইন্ডোজ ৯৫’ (Windows 95)-এর মাধ্যমে। এটি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম এবং এর ‘স্টার্ট’ মেন্যু, টাস্কবার এবং ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেস কম্পিউটিং-এর অভিজ্ঞতাকে চিরতরে বদলে দেয়। উইন্ডোজ ৯৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল এক বিশাল আয়োজন। রোলিং স্টোনসের “Start Me Up” গানের সাথে এর বিপণন এটিকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করে। এই অপারেটিং সিস্টেমটি এতটাই সফল হয়েছিল যে, এটি বিল গেটসের সেই স্বপ্ন—”প্রতিটি ডেস্কে এবং প্রতিটি বাড়িতে একটি কম্পিউটার”—বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। উইন্ডোজ ৯৫-এর মাধ্যমে মাইক্রোসফট পার্সোনাল কম্পিউটারের জগতে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
গেটসের নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়িক দর্শন
মাইক্রোসফটের অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে কেবল প্রযুক্তি ছিল না, ছিল বিল গেটসের আপসহীন, দূরদর্শী এবং কখনও কখনও বিতর্কিত নেতৃত্ব। তিনি কেবল একজন প্রোগ্রামার ছিলেন না, ছিলেন একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যবসায়ী, যিনি জানতেন কীভাবে বাজার দখল করতে হয় এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়।
একজন দূরদর্শী এবং আপসহীন নেতা
বিল গেটসের মূল লক্ষ্য ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট: “প্রতিটি ডেস্কে এবং প্রতিটি বাড়িতে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার চালিত একটি কম্পিউটার।” এই একটি ভিশনই তাঁকে এবং তাঁর পুরো কোম্পানিকে দশকের পর দশক ধরে চালিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন ‘হ্যান্ডস-অন’ নেতা। কোম্পানির একেবারে খুঁটিনাটি বিষয়েও তাঁর নজর থাকত। কথিত আছে, মাইক্রোসফটের প্রথম দিকের দিনগুলোতে তিনি কর্মীদের লেখা প্রতিটি লাইনের কোড নিজে রিভিউ করতেন।
তাঁর কাজের ধরণ ছিল তীব্র এবং আক্রমণাত্মক। মিটিংয়ে কোনো কর্মীর যুক্তিতে ফাঁক পেলে তিনি সরাসরি বলে বসতেন, “এটা আমার শোনা সবচেয়ে বোকার মতো কথা!” তাঁর এই স্বভাব অনেককে ভয় পাইয়ে দিলেও, এটি মাইক্রোসফটের ভেতরে একধরণের পারফেকশনিজম বা নিখুঁত হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। তিনি কর্মীদের থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করতেন। গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকা এবং ছুটির দিনেও কাজ করা ছিল মাইক্রোসফটের সাধারণ চিত্র। তাঁর এই কর্মনিষ্ঠা এবং জয়ের ক্ষুধা পুরো কোম্পানিতে সংক্রামিত হয়েছিল, যা মাইক্রোসফটকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।
প্রতিযোগিতা, বিতর্ক এবং অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা
সাফল্যের সাথে সাথেই আসে বিতর্ক। বিল গেটসের ব্যবসায়িক কৌশল প্রায়ই ছিল নির্মম। নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট জনপ্রিয় হতে শুরু করলে ‘নেটস্কেপ নেভিগেটর’ ব্রাউজারটি বাজারের প্রায় পুরোটাই দখল করে নেয়। বিল গেটস এই হুমকি মোকাবিলা করার জন্য তাঁর বিখ্যাত “The Internet Tidal Wave” মেমোটি লেখেন এবং পুরো কোম্পানির সমস্ত শক্তি ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য তৈরিতে নিয়োগ করেন।
মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব ব্রাউজার ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ তৈরি করে এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে বিনামূল্যে এটি জুড়ে দিতে শুরু করে। যেহেতু বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি কম্পিউটারে উইন্ডোজ চলত, তাই ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে পাওয়া ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারই ব্যবহার করা শুরু করে। এর ফলে নেটস্কেপের বাজার দ্রুত শেষ হয়ে যায়। মাইক্রোসফটের এই কৌশলকে বলা হয় ‘বান্ডলিং’ এবং এটিই তাদের সবচেয়ে বড় বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মার্কিন বিচার বিভাগ মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেমের একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্রাউজারের বাজারে প্রতিযোগিতা ধ্বংস করছে। এই মামলাটি বছরের পর বছর ধরে চলে এবং বিল গেটসের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফটকে ভেঙে ফেলার আদেশ রদ করা হয়, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা বিল গেটসের জীবনে এক গভীর ছাপ ফেলে যায় এবং তাঁকে তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
মাইক্রোসফট পরবর্তী জীবন: বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন
২০০০ সালে বিল গেটস মাইক্রোসফটের সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং ২০০৮ সালে কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেন। তিনি তাঁর জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এবার তাঁর যুদ্ধ ছিল প্রযুক্তির বাজারে নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে—দারিদ্র্য, রোগ এবং অসাম্য।
বিশ্বের বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্যোগ
২০০০ সালে তিনি ও তাঁর তৎকালীন স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। নিজেদের ব্যক্তিগত প্রায় সমস্ত সম্পদ তাঁরা এই ফাউন্ডেশনে দান করার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী: বিশ্বের প্রতিটি মানুষের যেন স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল জীবনযাপনের সুযোগ থাকে। আজ এই ফাউন্ডেশনটি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি দাতব্য সংস্থা, যার মাধ্যমে বিল গেটস মানবকল্যাণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান
গেটস ফাউন্ডেশনের কাজের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য। বিল গেটস ডেটা এবং বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এমন সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলা সম্ভব। পোলিও নির্মূলের লড়াইয়ে এই ফাউন্ডেশনটি অন্যতম প্রধান অর্থায়নকারী। তাঁদের প্রচেষ্টার ফলে পোলিও আজ পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল হওয়ার পথে।
তাঁরা ম্যালেরিয়া, এইচআইভি/এইডস এবং যক্ষ্মার মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছেন। একটি বাস্তব উদাহরণ হলো, আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ শিশুকে ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের অর্থায়নে বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, Gavi (the Vaccine Alliance)-এর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তাঁরা বিশ্বের কোটি কোটি শিশুকে জীবনরক্ষাকারী টিকা প্রদান করেছেন।
শুধু রোগ প্রতিরোধই নয়, স্যানিটেশন বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নেও তাঁদের উদ্যোগ যুগান্তকারী। তাঁদের “Reinvent the Toilet Challenge” প্রকল্পের মাধ্যমে এমন সব নতুন টয়লেট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে যা পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ছাড়াই কাজ করতে পারে। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ
বিশ্ব স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার মানোন্নয়নও গেটস ফাউন্ডেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। তাঁরা স্কুল সংস্কার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং নতুন পাঠ্যক্রম তৈরিতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। যদিও এই ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু উদ্যোগ সমালোচিত হয়েছে এবং প্রত্যাশিত ফল দেয়নি, কিন্তু এটি প্রমাণ করে যে বিল গেটস কঠিন সমস্যা থেকে পিছিয়ে আসতে রাজি নন। তিনি ক্রমাগত ডেটার ভিত্তিতে তাঁর কৌশল পরিবর্তন করেন এবং শেখার চেষ্টা চালিয়ে যান।
ব্যক্তিগত জীবন, বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মাইক্রোসফট এবং ফাউন্ডেশনের বাইরেও বিল গেটসের একটি নিজস্ব জগৎ আছে। তিনি একজন insatiable পাঠক, একজন চিন্তাবিদ এবং একজন বিনিয়োগকারী, যিনি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবেন।
বইপোকা বিল গেটস এবং তাঁর শেখার আগ্রহ
বিল গেটস বছরে প্রায় ৫০টি বই পড়েন। তাঁর এই পড়ার অভ্যাস তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে। বছরে দুইবার তিনি ‘থিংক উইক’ বা ‘চিন্তা সপ্তাহ’ পালন করেন। এই সময়ে তিনি একটি কেবিনে একাকী থাকেন এবং শুধুমাত্র পড়া, লেখা আর চিন্তা করার জন্য সময় কাটান। তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগ ‘গেটসনোটস’-এ তিনি নিয়মিত বইয়ের রিভিউ এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা শেয়ার করেন, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনুসরণ করে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্লিন এনার্জিতে বিনিয়োগ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিল গেটসের মনোযোগের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন সংকট। তিনি ২০২১ সালে “How to Avoid a Climate Disaster” নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি এই সংকট মোকাবেলার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
তিনি শুধু লেখালেখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন। তিনি ‘ব্রেকথ্রু এনার্জি ভেঞ্চারস’ (Breakthrough Energy Ventures) নামে একটি বিনিয়োগ তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই তহবিলের মাধ্যমে তিনি এমন সব যুগান্তকারী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছেন যা পৃথিবীকে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত করতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক শক্তি, দীর্ঘমেয়াদী ব্যাটারি স্টোরেজ এবং পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট ও স্টিল তৈরির প্রযুক্তি। তাঁর লক্ষ্য হলো এমন সব সমাধান খুঁজে বের করা যা কেবল পরিবেশবান্ধবই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী।
উপসংহার
বিল গেটসের জীবন একটি বহুমুখী মহাকাব্য। এটি একজন প্রযুক্তিবিদের গল্প, যিনি কোডিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন। এটি একজন ব্যবসায়ীর গল্প, যিনি একটি গ্যারেজের স্বপ্নকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানিতে পরিণত করেছেন। এবং পরিশেষে, এটি একজন মানবদরদীর গল্প, যিনি তাঁর অর্জিত সমস্ত সম্পদ ও মেধা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় মানুষগুলোর জীবন পরিবর্তনের ব্রত নিয়েছেন।
তাঁর যাত্রাপথ বিতর্কহীন নয়। মাইক্রোসফটের একচেটিয়া আধিপত্য এবং তাঁর নির্মম ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় অধ্যায়, অর্থাৎ বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি যে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন, তা অনস্বীকার্য। পোলিও নির্মূল থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা পর্যন্ত, তিনি মানবজাতির সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর সমাধানে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
বিল গেটস আমাদের দেখিয়েছেন যে, উদ্ভাবনের শক্তি কেবল মুনাফা অর্জনের জন্য নয়, মানবতার সেবা করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁর উত্তরাধিকার দুটি—একটি হলো ডিজিটাল যুগ, যা তিনি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন, এবং অন্যটি হলো একটি উন্নততর, স্বাস্থ্যকর এবং সমতাপূর্ণ বিশ্বের স্বপ্ন, যা তিনি বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই যাত্রা এখনো শেষ হয়নি, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তিনি অনুপ্রেরণার এক অফুরন্ত উৎস হয়ে থাকবেন।