বিন মিশালের অবিশ্বাস্য উত্থানের গল্প/The story of Bin Mishal’s incredible rise

বিন মিশালের অবিশ্বাস্য উত্থানের গল্প/The story of Bin Mishal’s incredible rise

বিন মিশাল- ট্যাক্সি চালক থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

প্রতিদিন সৌদি আরবের জেদ্দার সুউচ্চ অট্টালিকাগুলোর ফাঁক দিয়ে যখন সূর্য ওঠে, তখন হাজারো স্বপ্নের জন্ম হয়। আবার সেই সূর্য যখন লোহিত সাগরের বুকে অস্ত যায়, তখন হারিয়ে যায় অজস্র স্বপ্ন। এই স্বপ্ন গড়া আর ভাঙার শহরের বুকে কিছু গল্প তৈরি হয়, যা হার মানায় সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। আজ আমরা সেরকমই এক বাস্তব গল্পের কথা বলব। এ গল্প খুলনার ভৈরব নদের পাড়ে বেড়ে ওঠা এক সাধারণ তরুণের, যার নাম মোহাম্মদ মিশাল উদ্দিন; কিন্তু এই মরুভূমির বুকে তিনি পরিচিত “বিন মিশাল” নামে।

এটি কোনো কাল্পনিক আখ্যান নয়। এটি এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কঠোর পরিশ্রম, সততা আর দূরদর্শিতা দিয়ে “বিন-মিশাল ট্রাভেলস” নামক এক বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জীবন্ত কাহিনী। এ গল্প আমাদের শেখায়, কীভাবে মরুভূমির তপ্ত বালিতেও স্বপ্নের সবুজ চারা রোপণ করা যায়। চলুন, ডুব দেওয়া যাক বিন মিশালের জীবনের গভীরে।

বিন মিশাল ইউটিউব থেকে মানুষের হৃদয়ে

আজকের প্রজন্মের কাছে বা যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবে আসার স্বপ্ন দেখেন, তাদের কাছে বিন মিশাল শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, তিনি একজন ডিজিটাল মহীরুহ। তার ইউটিউব চ্যানেল Bin Mishal Official আজ প্রায় ৭ লক্ষ ৪০ হাজার (740k) সাবস্ক্রাইবারের এক বিশাল ডিজিটাল পরিবার। এই পরিচিতি তাকে জেদ্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এক নামে পরিচিত করে তুলেছে।

কিন্তু এই ইউটিউব যাত্রার শুরুটা হয়েছিল কোনো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং এক প্রকার সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে। কয়েক বছর আগে মিশাল লক্ষ্য করেন, হজ, উমরাহ এবং সৌদি আরবের জীবনযাত্রা নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর ভুল ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ডিজিটাল দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক সাধারণ মানুষ নিয়মিত প্রতারিত হচ্ছেন। নিজের অতীতের সংগ্রামের কথা মনে করে তিনি ঠিক করেন, এই মানুষগুলোকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন।

নিজের মোবাইল ফোন দিয়েই তিনি প্রথম ভিডিও বানান—”উমরাহ করতে এসে যে ৫টি ভুল কখনোই করবেন না”। খুলনার সহজ-সরল ভাষায়, কোনো রকম আড়ম্বর ছাড়াই তার আন্তরিক উপস্থাপন মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। তার চ্যানেলের মূল আকর্ষণ হলো তার ভেজালহীন সততা। তিনি কখনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখান না বা অযৌক্তিক আশ্বাস দেন না। কম খরচে থাকা-খাওয়ার উপায়, যাতায়াতের জন্য সেরা রুট, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের পরিচিতি থেকে শুরু করে সৌদি আরবের আইনকানুন—সবকিছু নিয়েই তিনি খোলামেলা, বাস্তবসম্মত আলোচনা করেন। তার চ্যানেলটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য এক ভার্চুয়াল অভিভাবকে পরিণত হয়েছে।

এই বিশাল ডিজিটাল খ্যাতির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামের পথ। চলুন, ফিরে যাই সেই শুরুতে, যখন বিন মিশাল নামের কোনো ইউটিউব সেনসেশন ছিল না, ছিল শুধু খুলনার এক স্বপ্নবাজ তরুণ, মিশাল।

শৈশব ও বেড়ে ওঠা (খুলনার জীবন)

ভৈরব নদের পাড়ে বেড়ে ওঠা মিশালের শৈশবটা ছিল নদীর মতোই দুরন্ত আর স্রোতস্বিনী। বাবা, একজন আদর্শবান স্কুল শিক্ষক, প্রায়ই বলতেন, “বাবা, জীবনে টাকার চেয়ে বড় হলো নীতি আর মানুষের দোয়া।” মধ্যবিত্ত সংসারে অভাব ছিল, কিন্তু অনাদর ছিল না। বাবার শেখানো সেই নীতিই ছিল মিশালের সবচেয়ে বড় সম্পদ। খুলনার লবণাক্ত বাতাসে মিশে থাকা ইলিশের ঘ্রাণ আর বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলার বিকেলগুলো তার মনে গেঁথে ছিল। কৈশোরের সেই দিনগুলোয় ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি ভাবনার অবকাশ ছিল না। কিন্তু সময়ের স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

বাবার অবসরের পর সংসারের হাল ধরার দায়িত্বটা তার কাঁধে এসে পড়ে। রাতের নিস্তব্ধতায় সে দেখত বাবার চিন্তাক্লিষ্ট মুখ, দেখত ছোট বোনের বিয়ের স্বপ্ন নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তা। সেই মুহূর্তে মিশাল বুঝতে পারে, তার দুরন্ত শৈশব শেষ। এখন তাকেই পরিবারের নোঙর হতে হবে। একদিন রাতে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে সে বলেছিল, “মা, আমি বিদেশে যাব। দেখবে, আমাদের আর কোনো অভাব থাকবে না।” সেই প্রতিজ্ঞার মধ্যে কোনো বিলাসিতার স্বপ্ন ছিল না, ছিল শুধু পরিবারকে ভালো রাখার এক তীব্র আকুতি। খুলনার মাটি ছেড়ে আসার সিদ্ধান্তটা তার জন্য সহজ ছিল না; সে যেন নিজের আত্মার একটা অংশকে সেই ভৈরবের পাড়েই রেখে আসছিল।

ব্যবসার প্রেরণা পাওয়া (সৌদি আরবের মাটিতে)

বিন-মিশাল

১৯ সেপ্টেম্বর  ২০০৭ সাল । জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে মিশালের মনে হয়েছিল, সে যেন এক উত্তপ্ত চুল্লির সামনে এসে পড়েছে। একদিকে মরুভূমির লু হাওয়া, অন্যদিকে ভাষার সম্পূর্ণ অপরিচিত জগৎ। তার সম্বল ছিল শুধু একটি ট্যাক্সি ড্রাইভারের ভিসা আর বুকে জমানো পরিবারের স্বপ্ন। তার ট্যাক্সির স্টিয়ারিং হুইলটা শুধু গাড়ি চালাত না, বরং শত শত মানুষের গল্প বয়ে বেড়াত। এই গল্প শুনতে শুনতেই সে সুযোগ খুঁজে পায়।

হজ ও উমরাহ করতে আসা বাংলাদেশি যাত্রীদের চোখেমুখে সে দেখত একরাশ ভক্তি, কিন্তু তার সাথে মিশে থাকত অসহায়ত্ব। দালালদের খপ্পরে পড়ে বেশি টাকা দেওয়া, সঠিক রাস্তা না চেনা, খাবারের কষ্ট—এগুলো ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। একদিন মদিনা থেকে এক বয়স্ক দম্পতিকে নিয়ে জেদ্দায় ফেরার পথে তিনি দেখেন, তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা। মিশাল নিজের পকেটের টাকা দিয়ে তাদের জন্য ঠান্ডা লাবান (পানীয়) আর রুটি কিনে আনে। সেই রাতে তার ঘুম হয়নি। যাত্রীদের অসহায় মুখগুলো তার চোখের সামনে ভাসছিল। সে বুঝতে পারে, এখানে শুধু গাড়ি চালিয়ে কিছু টাকা দেশে পাঠানোই তার শেষ গন্তব্য হতে পারে না। এই মানুষগুলোর জন্য যদি একটি নির্ভরযোগ্য সেবার ব্যবস্থা করা যায়, তবে তা হবে ইবাদত এবং ব্যবসা উভয়ই। সেই রাতেই তার ট্যাক্সির ভেতর জন্ম নেয় “বিন-মিশাল ট্রাভেলস” এর প্রথম স্বপ্ন।

প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ

স্বপ্ন দেখা যত সহজ, তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ততটাই কঠিন। মিশালের প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল টাকা। ট্যাক্সি চালিয়ে যা আয় হতো, তার বড় অংশই کفیل (স্পন্সর) কে দিয়ে এবং দেশে পাঠিয়ে সামান্যই অবশিষ্ট থাকত। সে দিনের পর দিন একবেলা খেয়ে, সস্তা خبز (রুটি) আর পানি দিয়ে রাতের খাবার সেরে টাকা জমাতে শুরু করে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল ভাষা ও নিয়মকানুন। সৌদি আরবের ব্যবসা সংক্রান্ত আইন, বিশেষ করে একজন বিদেশির জন্য, ছিল বেশ জটিল। সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভাঙা ভাঙা আরবিতে কথা বলে স্থানীয়দের সাথে মিশে যেত, শিখত তাদের সংস্কৃতি আর ব্যবসার রীতিনীতি।

তার সহকর্মী অন্য ড্রাইভাররা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। বলত, “দেখো, ড্রাইভার সাহেব ব্যবসায়ী হবে!” ইকামা (বসবাসের অনুমতি) নবায়নের চিন্তা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাকে রাতের পর রাত জাগিয়ে রাখত। কিন্তু খুলনার সেই জেদি ছেলেটা হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না। তার ছোট্ট নোটবুকে লেখা থাকত আরবি শব্দ আর ব্যবসার প্রাথমিক পরিকল্পনা। ওই নোটবুকটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। সে জানত, এই মরুভূমিতে টিকে থাকতে হলে শুধু পরিশ্রম করলে হবে না, বুদ্ধি আর জ্ঞানও অর্জন করতে হবে।

প্রথম উদ্যোগ (একটি পুরনো মাইক্রোবাস)

প্রায় পাঁচ বছরের জমানো পুঁজি আর এক বন্ধুর কাছ থেকে নেওয়া ধার দিয়ে মিশাল অবশেষে একটি পুরনো, প্রায় লক্কড়ঝক্কড় মাইক্রোবাস কেনে। গাড়িটা রাস্তায় চলার চেয়ে গ্যারেজেই বেশি থাকত। কিন্তু সেই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে তার মনে হয়েছিল, সে যেন গোটা পৃথিবীর মালিক। সে কোনো অফিস ছাড়াই কাজ শুরু করে। তার পুঁজি ছিল সততা আর পরিচিতি।

যাদেরকেই সে সেবা দিত, তারা তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হতো। সে শুধু ড্রাইভার ছিল না, ছিল যাত্রীদের আপনজন। এয়ারপোর্ট থেকে তুলে আনা, কম খরচে ভালো হোটেলের খোঁজ দেওয়া, অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া—সবই করত হাসিমুখে। যাত্রীরা দেশে ফিরে অন্যদের কাছে তার নম্বর দিত। মুখে মুখেই তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মানুষ তাকে তার কোম্পানির নামে নয়, বরং “আমাদের মিশাল ভাই” নামে চিনত। সেই পুরনো মাইক্রোবাস আর মানুষের বিশ্বাস—এই দুটিকে পুঁজি করেই শুরু হয়েছিল বিন মিশালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। এটি ছিল এক ক্ষুদ্র বীজের অঙ্কুরোদ্গম, যা একদিন বিশাল মহীরুহে পরিণত হবে।

সংগ্রাম ও ব্যর্থতা (একটি বড় ধাক্কা)

ব্যবসা যখন একটু একটু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখনই মিশাল জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায়। একা হাতে সব সামলাতে না পেরে সে এক স্বদেশী পার্টনারের সাথে কাজ শুরু করে। লোকটি ছিল মুখে মধুর কিন্তু ভেতরে ছিল লোভী। হজ্বের একটি বড় গ্রুপের সব টাকা অগ্রিম নিয়ে সেই পার্টনার হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মিশালের। একদিকে হজযাত্রীদের চাপ, অন্যদিকে কাঁধে চেপে বসা বিশাল ঋণের বোঝা। তার বিশ্বস্ত কফিলও তাকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেয়।

অনেকেই বলতে শুরু করে, “মিশাল নিজেই টাকা মেরে পালানোর ধান্দায় ছিল।” সততা দিয়ে গড়া তার সম্মানটুকুও যেন ধুলোয় মিশে যাচ্ছিল। জেদ্দার রাস্তায় রাস্তায় সে তার পার্টনারকে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কথাও তার মনে হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে সে শুধু কাঁদত আর বলত, “আল্লাহ, আমি তো কারও ক্ষতি করিনি, আমার সাথে এমন কেন হলো?” এটি ছিল তার জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা, যা তাকে প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছিল।

ধীরে ধীরে সাফল্যের দেখা পাওয়া (ঘুরে দাঁড়ানো)

মিশালের সততার শেকড় ছিল অনেক গভীরে। যাদের সে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছিল, তারাই এবার তার পাশে এসে দাঁড়ায়। একজন পুরনো যাত্রী, যিনি বাংলাদেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ঘটনা শুনে মিশালকে ডেকে পাঠান। তিনি শুধু তাকে আর্থিক সাহায্যই করেননি, বরং জেদ্দার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তার সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেও সাহায্য করেন। তিনি বলেন, “তোমার সততাই তোমার ব্র্যান্ড, এই ব্র্যান্ডকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।”

এই ঘটনায় মিশাল নতুন করে শক্তি পায়। সে আরও সতর্ক হয়ে একজন নির্ভরযোগ্য সৌদি নাগরিককে অংশীদার করে এবং আইনগতভাবে “বিন-মিশাল ট্রাভেলস” নামে লাইসেন্স করে। এবার তার পুঁজি ছিল আগের চেয়েও অনেক বেশি—অভিজ্ঞতা আর মানুষের আস্থা। ছোট একটি অফিস নিয়ে সে আবার শূন্য থেকে শুরু করে। পুরনো গ্রাহকরা তার সততার টানে ফিরে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ঋণের বোঝা কমে আসে এবং ব্যবসার চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে। এই ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল তার জেদ আর মানুষের ভালোবাসার সম্মিলিত জয়।

ব্যবসার প্রসার (সাফল্যের শিখরে)

এরপর মিশালকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তার সততা এবং সেবার মানের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো সৌদি আরবের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। একটি মাইক্রোবাস থেকে শুরু করে তার বহরে যুক্ত হয় অত্যাধুনিক বাস, বিলাসবহুল গাড়ি। জেদ্দার অন্যতম প্রাইম লোকেশনে সে বড় একটি অফিস নেয়। হজ ও উমরাহ প্যাকেজের পাশাপাশি সে টিকিট, ভিসা প্রসেসিং এবং কর্পোরেট ট্যুরিজমের ব্যবসাও শুরু করে।

তার প্রতিষ্ঠানে এখন অর্ধশতাধিক কর্মচারী, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি যুবক, যাদের সে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে। সে শুধু একজন সফল ব্যবসায়ীই নয়, কমিউনিটির একজন অভিভাবকও বটে। তার অফিসের দেয়ালে এখনও খুলনার একটি বড় ছবি ঝোলানো। যখনই কোনো নতুন বাস কেনা হয়, সে প্রথমে বাসের সিটে বসে চোখ বন্ধ করে একবার ভৈরব নদের কথা ভাবে। শিকড়কে সে ভোলেনি। খুলনায় একটি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে সে তার বাবার স্বপ্নকেও বাঁচিয়ে রেখেছে।


বিন মিশালের পথ থেকে ব্যবসার পাঠ (Business Lessons)

বিন মিশালের জীবন শুধু একটি অনুপ্রেরণার গল্প নয়, এটি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি জীবন্ত কেস স্টাডি। তার এই যাত্রা থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক শিক্ষা নিতে পারি:

  1. সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করুন: মিশাল কোনো নতুন পণ্য আবিষ্কার করেননি। তিনি শুধু হজ যাত্রীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং তার একটি মানবিক ও সৎ সমাধান বের করেছেন। সফল ব্যবসা সবসময় একটি বাস্তব সমস্যার সমাধান করে।
  2. সততাই শ্রেষ্ঠ মূলধন: যখন তার পার্টনার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়, তখন মিশাল প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পুরনো সততা এবং ভালো কাজের সুনামই তাকে বাঁচিয়ে দেয়। অর্থ হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু বিশ্বাস হারালে ফেরা কঠিন।
  3. ছোট থেকে শুরু করতে ভয় পাবেন না: একটি পুরনো মাইক্রোবাস দিয়ে শুরু করতে মিশাল লজ্জা পায়নি। প্রতিটি বিশাল প্রতিষ্ঠানই একদিন একটি ছোট স্বপ্ন থেকে শুরু হয়। বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথম ধাপটি ছোট হওয়াই স্বাভাবিক।
  4. ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, নতুন শুরু: প্রতারিত হয়ে সবকিছু হারানোটা তার জীবনের শেষ হতে পারত। কিন্তু সে এটিকে একটি শিক্ষা হিসেবে নিয়েছে। ব্যর্থতা উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
  5. গ্রাহককে পরিবারের অংশ ভাবুন: মিশাল তার যাত্রীদের শুধু গ্রাহক হিসেবে দেখেনি, দেখেছে নিজের স্বজন হিসেবে। এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে এবং একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড তৈরি করেছে।
  6. শিকড়কে ভুলে যাবেন না: সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেও মিশাল তার খুলনাকে, তার অতীতকে ভোলেনি। শিকড়ের প্রতি এই টান তাকে অহংকারী হতে দেয়নি এবং তাকে আরও বেশি মানবিক করে তুলেছে।

উপসংহার: যেখানে স্বপ্নেরা ডানা মেলে

আজ, ২০২৫ সালের এক বিকেলে, বিন মিশাল তার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) অফিসের কাঁচের দেয়ালের ওপারে ব্যস্ত জেদ্দা শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। আসরের আজান ভেসে আসছে। তার আর ট্যাক্সি চালাতে হয় না, কিন্তু গাড়ির হর্নের শব্দে সে এখনও নিজের অতীতের প্রতিধ্বনি শুনতে পায়। তার উপলব্ধি হয়েছে, সাফল্য কোনো চূড়া নয়, এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা। এই যাত্রাপথে টাকার চেয়েও বেশি প্রয়োজন সততা, ধৈর্য এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

বিন মিশালের জীবন কাহিনী এখন একটি অনুপ্রেরণা—খুলনার জল দিয়ে মরুভূমির বুকে সফলতার ফুল ফোটানোর এক জীবন্ত উপাখ্যান। তার গল্পটি আমাদের বলে, আপনার প্রেক্ষাপট যা-ই হোক না কেন, আপনার স্বপ্ন যদি সৎ হয় এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য যদি আপনার মধ্যে থাকে অদম্য ইচ্ছা, তাহলে কোনো মরুভূমিই আপনার পথ আটকাতে পারবে না। আপনার মরুভূমি হয়তো ভিন্ন, কিন্তু সেই মরুভূমিতে ফুল ফোটানোর নীতিগুলো একই।

বিন মিশাল ট্রাভেল রিয়াদ- 0560694671 বিন মিশাল ট্রাভেলস মক্কা- 0537209416 পাসপোর্ট মালুমাত,জেয়ারা ভিসার জন্য- 0595505124 || 0550893716 তথ্যের জন্য কল দেন 0540309676 …

Leave a Comment

সম্পর্কিত পোস্টসমূহ

আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Scroll to Top